গাজীপুরের শিল্প-অধ্যুষিত এলাকা হিসাবে খ্যাত কাশিমপুর। আর এই কাশিমপুরের অধিকাংশ এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক সড়কবাতি থেকেও যেন নেই। অনেক জায়গায় সড়কবাতি স্থাপনের জন্য ল্যাম্পপোস্ট থাকলেও, বাতিগুলো দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট।

সড়কবাতি না থাকায় কাশিমপুরবাসীকে বাজারের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আলো ও সড়কে চলাচলরত যানবাহনের লাইটে সাময়িক আলোয় ভরসা করতে হচ্ছে। পাড়া-মহল্লার অনেক এলাকায় সন্ধ্যা নামলেই ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসে। বাসিন্দাদের চলাচলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ঘটছে চুরি-ছিনতাই ও মাদক সেবীদের আড্ডা। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, প্রায় ৬ মাস ধরে চলছে এই অবস্থা।

মঙ্গলবার (২৭ মে) ও বুধবার (২৮ মে) কাশিমপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সড়কেই অনেক দূর পরপর দু–চারটা বাতি জ্বলে। তারপর আবার কিছুটা অন্ধকার। সড়কের পাশে ল্যাম্পপোস্ট থাকলেও সেগুলোর বাতি নষ্ট থাকায় আলো জ্বলছে না। বর্তমানে সড়কগুলোতে যে পরিমাণ সড়কবাতি জ্বলছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত। বিভিন্ন বাজার, বাণিজ্যিক এলাকা ও আবাসিক এলাকাগুলোতে সড়কবাতি কিছুটা দেখা গেলেও পাড়া ও মহল্লার অধিকাংশ সড়কে সড়কবাতি নেই।

বিশেষ করে কাশিমপুর থেকে জিরানি বাজার ব্যস্তময় আঞ্চলিক সড়কের অধিকাংশ এলাকায় বাতি জ্বলে না। সন্ধ্যা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত কয়েকটি শিল্প কারখানা ও দোকানপাটের আলোতে মানুষ চলাচল করে আসলেও, তার পরে আড্ডা জমে মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের। ইতোপূর্বে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার পর সড়কবাতি না থাকাকে দায়ী করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

কাশিমপুরের ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাজ্জাক মিয়া, আজিজুল ইসলাম ও সঞ্জয় সাহা জানান, তাদের এলাকায় প্রায় ২ বছর আগে সড়কের পাশে কিছু দূর পরপর কিছু ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়। ল্যাম্পপোস্টে বাতি লাগানোর কিছুদিন পর প্রায় বাতি নষ্ট হলে আবার লাগানো হয়। কিন্তু গত ৬ মাস ধরে প্রায় বাতি জ্বলছে না। বাতি লাগানোর উদ্যোগ দেখা যায়নি। সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১ ও ২ নং ওয়ার্ডের বেশ কিছু নির্জন সড়কের খুটিতে জ্বলছে না বাতি। যে কারণে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে চলাচল করে আসছে। আর এতে বেড়েছে কিশোর গ্যাং ও মাদক সেবীদের আনাগোনা। সেই সঙ্গে ডাকাত আতঙ্কে স্থানীয় বাসিন্দারা নিজস্ব বাতি ব্যবস্থা করে রাতে মাঝেমধ্যে পাহারায় দিতে দেখা গেছে।
ভবানীপুর এলাকার সুমন ও মাসুদ মিয়া বলেন, সিটি কর্পোরেশনের আগের কার্যক্রম আর বর্তমান কার্যক্রমে ব্যাপক স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এর কারণ হচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি না থাকায়। এখন কাকে বলবে বা কে গিয়ে জানাবে, এর কোন সঠিক জবাবদিহি না থাকায় মূলত এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। তাই আমরা কাশিমপুরবাসী বাতি মেরামতসহ রাস্তার পানি নিষ্কাশনের জটিলতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের বিদ্যুৎ শাখা থেকে জানা যায়, কাশিমপুরে বিভিন্ন এলাকা মিলে প্রায় এক হাজার তিনশত বাতি স্থাপন করা হয়েছে। এসব বাতির মধ্যে প্রায় কয়েক শতাধিক বাতিতে জ্বলছে না আলো।

এ বিষয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ), চঃদাঃ মোঃ বোরহান উদ্দিন বলেন, একদিকে আমাদের জনবল সংকট রয়েছে, অপরদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কিংবা শর্টসার্কিট বা ট্রান্সফরমারে বিস্ফোরণ ঘটলে অনেক সময় বাতি নষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেক সময় বাতিগুলো ইট ছুড়ে নষ্ট করে দেওয়া হয়, চুরি করে নিয়ে যায়। বাতি নষ্ট হয়ে গেলে সেগুলো সংস্কার করা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তাছাড়া অভিযোগ পেলে আমরা লাগিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।