চাঁদপুর শহরের বাবুরহাট ট্যাক্সিক্যাব স্ট্যান্ডে চাঁদপুর পৌরসভার নির্ধারিত টোলের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ইজারাদারদের বিরুদ্ধে। পৌরসভা যেখানে প্রতিটি গাড়ির কাছ থেকে দৈনিক একবার ২০ টাকা টোল নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে, সেখানে বাস্তবে আদায় করা হচ্ছে প্রতিটি ট্রিপে ৪০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাবুরহাট স্ট্যান্ডে কর্মরত ড্রাইভারদের কাছ থেকে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার প্রতি প্রতিবার ঢাকাগামী বা চাঁদপুরগামী ট্রিপে ৪০০-৫০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। এমনকি চাঁদপুরের বাইরে থেকে আসা গাড়ির ক্ষেত্রে যাত্রী প্রতি ১০০ টাকা হারে অর্থাৎ ৬ সিটের গাড়ির জন্য ৬০০ টাকা ও ১০ সিটের গাড়ির জন্য ১০০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।
যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, নৌপথে যাতায়াতের তুলনায় সড়কপথে ভাড়া দ্বিগুণ থেকে পাঁচগুণ পর্যন্ত বেশি। বিশেষ ছুটি বা উৎসবের সময় এই ভাড়া আরও বৃদ্ধি পায়। এসি গাড়িতে যাত্রী প্রতি ভাড়া গুনতে হয় ৬০০-৭০০ টাকা, যেখানে নন-এসি গাড়িতে নেওয়া হয় ৪০০-৫০০ টাকা।
ভাড়া বেশি নেওয়ার পেছনে দায় চাপানো হচ্ছে ইজারাদারদের টোল নীতির ওপর। ড্রাইভারদের বক্তব্য, পৌরসভার নিয়ম অনুযায়ী তারা প্রতিদিন একবার ২০ টাকা টোল দেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে ইজারাদাররা প্রতি ট্রিপে বিশাল অঙ্কের টাকা আদায় করছে। এর ফলে বাধ্য হয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
প্রতিবাদ না করার বিষয়ে একাধিক চালক জানান, “ইজারাদারেরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে কিছু বললে স্ট্যান্ডে দাঁড়াতে দেওয়া হয় না, পরদিন ট্রিপ পেতেও সমস্যায় পড়ি।
চাঁদপুর পৌরসভার কর শাখার প্রধান তৌহিদুল ইসলাম চপল বলেন, “২০০৯ সাল থেকে পৌরসভা বাবুরহাট স্ট্যান্ডটি ইজারা দিয়ে আসছে। চলতি বছর ২৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় হাবিবুর রহমান মাল নামের এক ব্যক্তি স্ট্যান্ডটির ইজারা নেন। সাথে রয়েছে ১০% আয়কর, ১৫% ভ্যাট এবং ৫% জামানত।
তিনি আরও বলেন, “ইজারাদারদের টোল আদায়ের ক্ষেত্রে স্পষ্ট নীতিমালা আছে। প্রতিটি গাড়ি থেকে দিনে একবার ২০ টাকা আদায় করা যাবে। এর বাইরে অতিরিক্ত কিছু আদায়ের সুযোগ নেই।” তবে গাড়ি প্রতি ৪০০-৫০০ টাকা টোল আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, “এমন কোনো লিখিত অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।”
অন্যদিকে, ওয়্যারলেস মোড়ের স্ট্যান্ড নিয়েও রয়েছে চরম অনিয়মের অভিযোগ। সেখানেও প্রতিটি মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার থেকে ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে জানান চালকরা। কিন্তু এই স্ট্যান্ডটি আদৌ পৌরসভার আওতায় আছে কি না জানতে চাইলে চপল বলেন, “ওয়্যারলেস মোড়ে পৌরসভার কোনো স্ট্যান্ড নেই। তবে কারা চাঁদা তুলছেন, সে বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। পৌর প্রশাসক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।
চাঁদপুরের যাত্রী সাধারণ এবং চালকদের অভিযোগ বলছে নিয়মিত টোল নির্ধারিত থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ইজারাদারদের দৌরাত্ম্যে অতিরিক্ত অর্থ আদায় যেন এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। পৌরসভার নির্লিপ্ততা ও নজরদারির অভাবেও দিন দিন এ অনিয়ম বাড়ছে। এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি স্থানীয়দের।