প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় এক কলেজ পড়ুয়া তরুণীকে অনলাইনে হেনস্তা ও সামাজিকভাবে হেয় করার অভিযোগ উঠেছে এক সৌদি প্রবাসীর বিরুদ্ধে। ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার চুকিনগর গ্রামের বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম রাসেল নামের ওই প্রবাসী দেশের মাটিতে না থেকেও দেশের এক তরুণীর জীবনে বিষ ছড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ও তার পরিবার।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, কলেজে পড়ুয়া ঐ তরুণীর সঙ্গে প্রবাসী রাসেলের পূর্ব পরিচয় ছিল। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে রাসেল একসময় মেয়েটিকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। মেয়েটির পরিবারও এতে প্রাথমিকভাবে সম্মতি প্রকাশ করলেও রাসেলের পরিবার হঠাৎ করেই তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়, ফলে বিয়ের বিষয়টি অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। এরপর রাসেল তরুণীকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়, কিন্তু তরুণী স্পষ্টভাবে সেটি প্রত্যাখ্যান করলে রাসেল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর থেকে শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারের এক নিষ্ঠুর অধ্যায়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ, রাসেল তার একাধিক ভুয়া ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সম্পর্কে ভিত্তিহীন, কুরুচিপূর্ণ ও অপমানজনক তথ্য ছড়াচ্ছেন। এমনকি রাসেল দাবি করেন, মেয়েটি তার আপন ভগ্নিপতির সঙ্গে পালিয়ে গেছে—যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বাস্তবে সংবাদকর্মীরা মেয়েটিকে তার নিজ বাড়িতে অবস্থানরত অবস্থায় দেখতে পান এবং জেনেছেন, তিনি তার চলমান অনার্স পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত।
“রাসেল আমার ফেসবুক আইডি হ্যাক করার চেষ্টা করেছে,” অভিযোগ করে মেয়েটি বলেন, “হ্যাক করতে না পেরে সে আমার ছবি নিয়ে বিভিন্ন অশ্লীল ও আপত্তিকর মন্তব্যসহ পোস্ট দিচ্ছে। এতে আমার মান-সম্মান ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। এখন লজ্জায় রাস্তায় চলাফেরা করতেও ভয় পাচ্ছি।”
মেয়েটির মা বলেন, “আমার স্বামী নেই। একমাত্র মেয়েকে অনেক কষ্ট করে কলেজে পড়াচ্ছি। অথচ রাসেল ওর জীবনটা নষ্ট করে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। একবার থানায় জিডি করেছিলাম, কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। বরং সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নানা মাধ্যমে আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, আর ফেসবুকে মেয়েটির নামে মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে।”
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি সাহায্যের আকুল আবেদন জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার। তারা চায়, প্রবাসে অবস্থান করলেও রাসেলকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
স্থানীয় সচেতন মহল এ ঘটনাকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেয়েদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে চরিত্র হননের মত জঘন্য কাজকে তারা নৈতিক ও আইনগতভাবে অপরাধ বলেই উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে, প্রবাসে থাকায় অভিযুক্ত রাসেল আরিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তার বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।