টাঙ্গাইলের মধুপুরে দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদটি বাংলাদেশের মধুপুর জাতীয় উদ্যানের শালবনে বেশ কয়েকটি রয়েছে। ফুলগুলো দেখতে কদম ফুলের মত হলেও এর আকার কিছুটা ছোট।
বৃষ্টিভেজা দিনে কদম ফুলের সৌন্দর্য আর সুবাস নিয়ে কতই না রচিত হয়েছে কবিতা এবং গান। প্রজাতি হিসেবে দেশে দুই প্রকার কদমের দেখা মেলে। সাধারণ কদম আর কেলিকদম।
সাধারণ কদম গ্রামবাংলার ঝোপজঙ্গলে সহজেই চোখে পড়ে। কিন্তু কেলিকদম বিরল বৃক্ষ। আর এ বিরল কেলিকদমের দেখা মিলেছে টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চলে। বিষয়টি বৃক্ষপ্রেমীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
টাঙ্গাইল বন বিভাগের তথ্যে সূত্রে জানা গেছে, কেলিকদম শালবনের সহযোগী বৃক্ষ। আমলকি, বহেড়া, হরিতকি, সোনালু ও কুচির মতোই কেলিকদম শালবনে শোল পেত। কিন্তু টানা সাড়ে তিন দশক ধরে শালবনের গজারি ও সহযোগী বৃক্ষ নিধন করে বিদেশি প্রজাতির আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাসের মতো বৃক্ষে বাণিজ্যিক বনায়ন হয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বিশ্ব ব্যাংকের টাকায় ক্ষতিকর বনায়নে প্রাকৃতিক বন উজাড়ের পাশাপাশি দেশি প্রজাতির বহু বৃক্ষ, ভেষজ উদ্ভিদ ও গুল্মলতাদি বিলুপ্ত হয়। এ সর্বনাশা বনায়নে হারিয়ে যায় কেলিকদম।
এক মাস আগে মধুপুর বনাঞ্চলের জাতীয় সদর উদ্যান রেঞ্জের ফরেস্টার মোশারফ হোসেন গাছাবাড়ী বিটের গজারি বনে দুটি কেলিকদম গাছের সন্ধান পায়।
তিনি জানায়, টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ হাইওয়ে সড়কের মধুপুর উপজেলার বড়বাইদ এতিমখানার কাছাকাছি গজারি বনে কেলিকদম গাছ দুটি দাঁড়িয়ে রয়েছে। বর্ষায় প্রচুর ফুল ধরেছে। মৌমাছি ও প্রজাপতি ফুল থেকে ফুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি কেলিকদম গাছ নিয়ে দুই মিনিটের ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করেন। এতে সর্বত্র সাড়া পড়ে যায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। এরপর থেকেই বিভিন্ন অঞ্চলের অনেকেই কেলিকদম দেখার জন্য আসতেছে।
টাঙ্গাইল বন বিভাগের তথ্যে আরও জানা যায়, কেলিকদম শালবনের সহযোগী বৃক্ষ। এই বৃক্ষের বৈজ্ঞানিক নাম মিত্রযান্য পার্ডিফোলিয়া। একে ধূলিকদম্ব নামেও ডাকা হয়। ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর দেখা মিললেও বাংলাদেশে এটি এখন দুর্লভ। সাধারণ কদম গাছ আকারে বড়। পাতা, ফুল, ফলও বড়। কিন্তু বহু শাখাবিশিষ্ট পত্রমোচী কেলি গাছ আকারে ছোট। পাতা, ফুল বা ফলও ছোট। হলুদ রঙের ফুল বৃত্তাকার ও সুগন্ধযুক্ত হয়। গাছের পাতা, কুঁড়ি, ছাল ও শেকড় ভেষজ হিসেবে সমাদৃত।
কেলিকদম নিয়ে ভারতের প্রাচীন কবিরা অনেক শ্লোক লিখেছেন। কৃষ্ণভক্তরা তো কেলিকদমকে পবিত্র বৃক্ষ মনে করেন। বীজ ও কলমের মাধ্যমে এর বংশ বিস্তার সম্ভব বলে মনে করেন উদ্ভিদবিদরা।
অবসরপ্রাপ্ত উদ্ভিদবিদ ড. নজরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, সাধারণ কদমের চেয়ে পাতা ও ফুল ছোট হয়। ঢাকা, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের শালবন এলাকায় এক সময় প্রচুর কেলিকদম গাছের দেখা মিলত। কিন্তু সামাজিক বনায়নের নামে সংরক্ষিত বনভূমিতে দ্রুত বর্ধনশীল বিদেশি আগ্রাসী প্রজাতির গাছের বাণিজ্যিক বনায়ন করায় প্রাকৃতিক বন যেমন উজাড় হয়ে যায়, তেমনি গজারি ছাড়াও এর সহযোগী মূল্যবান দেশি গাছপালা বিলুপ্ত হয়ে যায়। এসব কারণে কেলিকদম বিনাশ থেকে রেহাই পায়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,কেলি কদম ফুল কদম ফুলের মতোই, তবে আকারে ছোট এবং মাধুর্যপূর্ণ। এটি দুর্লভ হওয়ায় এর সংরক্ষণ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের অভিমত: উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কেলি কদম একটি বিরল প্রজাতি এবং এর সংরক্ষণ প্রয়োজন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, কেলি কদমের সাথে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমকাহিনির সম্পর্ক রয়েছে। কথিত আছে, কৃষ্ণ রাধাকে কেলি কদম ফুল উপহার দিয়েছিলেন।
কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ফুলের প্রস্ফুটন সময়ে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। গরমের শুরুতে বা হঠাৎ বৃষ্টি হলে কদম গাছে আগে ফুল আসতে পারে। বর্ষার আগমনী বার্তা নিয়ে আসে কদম ফুল।
সংরক্ষণ: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেলি কদম ফুলের মতো বিরল উদ্ভিদ সংরক্ষণে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে অন্যান্য গাছের পাশাপাশি কেলি কদম গাছ রোপণ করা উচিত।