1. info@www.jayjaysomay.com : দৈনিক যায়যায় সময় :
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ০১:৪০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ:

নগরজীবনে মানসিক স্বাস্থ্য: চাপ, একাকীত্ব ও করণীয়

যায়যায় সময় ডেস্ক:
  • প্রকাশিত: শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫
  • ২ বার পড়া হয়েছে

নগরজীবন আমাদের অধিকাংশ মানুষের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জীবনের প্রয়োজনে নগরজীবন আমাদের দিয়েছে কর্মব্যস্ততা, ভিন্নধারার জীবনযাপন এবং প্রযুক্তির ছোঁয়া। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো শহর আমাদের দিয়েছে অজস্র সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু এই চাকচিক্যের আড়ালে খুব নীরবে সংকটে পড়েছে মানসিক স্বাস্থ্য।

বিশেষ করে চাপ এবং একাকীত্ব নগরজীবনের এক তিক্ত বাস্তবতা, যা অনেক সময়ই অলক্ষ্যে থাকলেও মানসিক স্বাস্থ্যকে ঠিকই প্রভাবিত করে নেতিবাচকভাবে।

কিছু ক্ষেত্রে শহরের জীবন মানেই যেন এক নিরন্তর সংগ্রাম। কর্মক্ষেত্রে উচ্চাকাঙ্ক্ষা, চাকরির অনিশ্চয়তা, জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়, যানজট, অফিস কিংবা পারিবারিক সংকটের চাপ-সবকিছু মিলেমিশে তৈরি হয় এক বিশাল মানসিক চাপের জঞ্জাল।

এই চাপ শুধু কর্মজীবীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; পরিবারের সব সদস্যকেই প্রভাবিত করে প্রায় সমানভাবেই। পরিবারের পুরুষ, শিশু বা গৃহিণী পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই কমবেশি প্রভাবিত হন এই চাপে। কর্মক্ষেত্রে লক্ষ্য পূরণের তাগিদ, সহকর্মীদের সাথে প্রতিযোগিতা, অফিসের অপরাজনীতি এবং কাজের দীর্ঘ সময় কেবলই মানসিক চাপ বৃদ্ধি করেই যায়।

এর ফলে অনিদ্রা, উদ্বেগ এবং একসময় বার্নআউটের মতো গুরুতর সমস্যা অজান্তেই নিজেকে জীবনের খারপ পরিণতির দিকে যাত্রা করায়। শহুরে মধ্যবিত্তকে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য অনেক সময় অতিরিক্ত কাজ করতে হয়, অতিরুক্ত চাপ নিতে হয় যা মানসিক চাপকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
সেই সাথে আধুনিক নগরজীবনে মানুষের হাতে সময় কম। ব্যক্তিগত জীবন, পরিবার এবং সামাজিকতার জন্য পর্যাপ্ত সময় না পাওয়ায় মানুষ ক্রমশ মানসিক চাপের শিকার হযন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকা এবং শহরের দূষিত পরিবেশও মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সমানতালে।

নগরজীবন আপাতদৃষ্টিতে সামাজিক মনে হলেও, এর অভ্যন্তরে থাকে এক যান্ত্রিক জীবনের কাঠামো। এই জীবনে ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো অনেক সময়ই দুর্বল হয়ে পড়ে। কাজের সূত্রে পরিবার থেকে দূরে থাকা বা ছোট পরিবারে বসবাস করার প্রবণতা মানুষকে একাকী করে তোলে।

প্রযুক্তির উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা মানুষকে বাস্তব জীবনের সামাজিকতা থেকে দূরে সরিয়ে ভার্চুয়াল জগৎকে কাছে নিয়ে আসছে। আর ভার্চুয়াল জগৎ যতটাই বড় হোক না কেন, তা কখনওই সত্যিকারের মানবিক সম্পর্কের বিকল্প হয় না। আর এর ফলে একাকীত্ব দীর্ঘমেয়াদী অবসাদ এবং উদ্বেগের ডেকে নিয়ে আসে। যখন মানুষ তার অনুভূতিগুলো অন্যের সাথে ভাগ করে নিতে পারে না, তখন তা মনের মধ্যে তৈরি করে প্রবল চাপ।

তাহলে এ থেকে বের হওয়ার কি উপায়? চাপ এবং একাকীত্বের এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় কিছু কার্যকর পদক্ষেপই বা কি হতে পারে? এর মোকাবলায় প্রথমে কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে একটি সুস্থ ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন। ব্যস্ততার মাঝেও নিজের জন্য সময় বের করা, শখের পেছনে সময় দেওয়া এবং বিশ্রাম কিছুটা হালকা করতে পারে মাথার ভার। পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ, ভার্চুয়াল জগতের বাইরে বাস্তব জীবনে সামাজিক সম্পর্ক, নিয়মিত শরীরচর্চাও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

হাঁটাচলা, সবুজের সাথে সময় কাটানো, সকালে ঘুম থেকে উঠা ইত্যাদিও মনকে সতেজ রাখতে সহায়তা করতে পারে। সেই সাথে পর্যাপ্ত এবং নিরবচ্ছিন্ন ঘুম মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অপরিহার্য। ঘুমের অভাব মানসিক চাপ এবং উদ্বেগকে বাড়িয়ে তোলে।

পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা। জাঙ্ক ফুড এবং ক্যাফেইন অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা। নৈতিকতায় অটল থাকাটাও আপনাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী রাখতে পারে।

সেই সাথে নিজেকেও নিয়ন্ত্রন করুন। নিজের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে কোনো কিছু করার চেষ্টা করবেন না। কাজের ক্ষেত্রে বা সামাজিক সম্পর্কে না বলতে শেখা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। আর যদি মানসিক চাপ বা একাকীত্ব তীব্র আকার ধারণ করে এবং দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে, তাহলে একজন মানসিক স্বাস্থ্য সাহায্য নিতে দ্বিধা করা উচিত নয়। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া কোনো লজ্জার বিষয় নয়, বরং নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

নগরজীবন আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে, কিন্তু এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। মানসিক চাপ এবং একাকীত্ব এই নেতিবাচক দিকগুলোর অন্যতম। সচেতনতা, নিজের যত্ন এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের বা মনোরোগ বিষেশজ্ঞ কারো সাহায্য নেওয়ার মাধ্যমে আমরা এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে নগরজীবনেও একটি সুস্থ ও সুখী জীবনযাপন করার চেষ্টাতা করতেই পারি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট