গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরের বিভিন্ন এলাকার মাদক কারবারিদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছে থানা পুলিশ। মাদক কারবারী ও সেবনকারীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে চলে থানার বেশ কিছু পুলিশ সদস্য ও তাদের সোর্সরা।কোন মাসে যোগাযোগ বন্ধ হলেই চলে অভিযান। আটক করে কয়েকগুন টাকা আদায় করা হয়।
কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটকের মুহূর্তে কাশিমপুর থানার ওসি মনিরুজ্জামানকে বিষয়টি জানানো হলেও বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেয়। কিন্তু পরক্ষণেই ওসির যোগসাজশে পুলিশ (এএসআই বা এসআইরা) টাকার বিনিময়ে মাদক কারবারিকে ছেড়ে দিচ্ছে।
কিছুদিন আগে আঁখি নামের এক নারী মাদক ব্যবসায়ীকে লোহাকৈর এলাকা থেকে আটক করে কাশিমপুর থানার উপ- পরিদর্শক (এসআই) রোকন। পরে সেখানে এক দোকানে বসে দুই লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেয়ার রফাদফা শুরু হয়।
আঁখিকে আটকের বিষয়টি নিয়ে কাশিমপুর থানার ওসি মনিরুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আটকের বিষয়টি শুনেছি তবে এখনো তাকে থানায় আনা হয়নি।
পরে আঁখিকে ধরার ব্যাপারে কাশিমপুর থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক ( এসআই) রোকনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসামী ধরেছি কিন্তু মাল (ইয়াবা) তো পাইনি। তবে ওসি স্যারের সাথে কথা বলেছি আমি আসতেছি।
এসময় এসআই রোকন সাংবাদিককে বলেন, আপনি ওসি স্যারের রুমে ঢুকেন, আমি আসতেছি।
দুই লক্ষ টাকার বিনিময়ে ওই মাদক ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে কনফার্ম করেছেন।এবিষয়ে জানতে চাইলে ওই পুলিশ সদস্য হেসে হেসে বলেন, মানুষ তো কত কথাই না কয়। আসলে অত টাকা নয়, যা বলেছেন তার চার ভাগের একভাগ (৫০ হাজার) পেয়েছি।
অবশেষে সংবাদিকরা সঠিক তথ্য প্রমাণ পেয়ে যাওয়ায়, তিনি ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে রফাদফার কথা স্বীকার করে বলেন, আচ্ছা সমস্যা নাই, আপনি ওসি স্যারের সাথে কথা বইলেন, খরচপাতি যেটা আছে দিবনি।
এর ঘন্টা খানিকপরেই খোঁজে নিয়ে জানা যায়, তাকে ( আঁখি) গ্রেফতার করে থানায় না নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
মাদক কারবার বিষয়ে আঁখি বলেন, ছোট ছোট সন্তানদের বাঁচানোর ও নিজের পেটের দায়ে এ ব্যবসা করি।
গত বুধবার (১৮ জুন) রাত আনুমানিক ১১টা ৫০ ঘটিকার দিকে মহানগরীর কাশিমপুরের ৪নং ওয়ার্ডের সারদাগঞ্জ মুন্সি মার্কেট এলাকার চিহ্নিত মাদক সম্রাট জুয়েল হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালায় এসআই মঞ্জুরুল ইসলাম ও তার সোর্স রহিম।
পরে ওই মাদক কারবারিকে ছেড়ে দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জিএমপি কাশিমপুর থানার এসআই মঞ্জুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ওই মাদক কারবারিকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ৪০ হাজার টাকা দাবি করে ওই পুলিশ সদস্য,পরে স্থানীয় কয়েকজনের তদবিরে নগদ ২০ হাজার টাকা ও বাকি ২০ হাজার টাকা দুদিনের মাঝে পরিশোধ করার জন্য স্থানীয় এক নেতার জিম্মায় রেখে আসেন তিনি।
ঘটনার বিষয়ে মাদক কারবারি জুয়েলের সাথে কথা বললে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমার বাসায় অভিযান চালিয়ে কোন কিছু না পেয়েও আমার কাছে ৪০ হাজার টাকা দাবি করে এসআই মঞ্জুরুল ও সোর্স রহিম। পরে কয়েকজনের মধ্যস্থতায় নগদ ২০ হাজার টাকা দিয়ে দেই। আর বাকি ২০ হাজার টাকা পরে দিব।
এবিষয়ে অভিযুক্ত কাশিমপুর থানার এসআই মঞ্জুরুল ইসলামের কাছে মাদক কারবারীর বাড়ীতে অভিযান ও টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি তো সবই জানেন! আপনার কাছে তো সব তথ্যই রয়েছে এবং পেয়েছেন। কথার এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের সাথে দেখা করে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন তিনি।
গত মে মাসে সারদাগঞ্জ এলাকা থেকে মানিক ও রোকন নামের দুই পুলিশ সদস্য (এএসআই ও এসআই) আন্নাছ আলী নামের এক মাদক সেবনকারীকে হাতেনাতে আটকের মুহূর্তে ওসি মনিরুজ্জামানকে জানালেও তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, 'এভাবেই যদি মাদক কারবারিরা অর্থের বিনিময়ে পার পেয়ে যায়, তাহলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থা কোথায় দাঁড়াবে?' তারা দ্রুত মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
এ ঘটনার বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি ক্রাইম (উত্তর) রবিউল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি জানান, অপরাধী অপরাধ করে কোনভাবে ছাড় পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।আমরা অতি দ্রুত তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।