জয়পুরহাট কালাই উপজেলার পার্বতীপুর-শিবসমুদ্র রাস্তা এখন এলাকাবাসীর জন্য এক স্থায়ী দুর্ভোগে রূপ নিয়েছে। ‘উন্নয়নের আশ্বাসে’ শুরু হওয়া এই প্রকল্প বর্তমানে প্রতিনিয়ত জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেড় বছর ধরে ইট বিছানো রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রেখে কার্যত উধাও হয়ে গেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার।
সরজমিনে গিয়ে জানাগেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমান ট্রেডিং ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পার্বতীপুর-শিবসমুদ্র ইট বিছানো রাস্তার ইট তুলে অর্ধ কিলোমিটার রাস্তার কাজ শুরু করেন। রাস্তাটি খুঁড়ে রাখার কারণে কোন পণ্য বহনে দ্বিগুণেরও বেশি ভারা গুনতে হচ্ছে কৃষক ও সাধারণ মানুষদের। আর বৃষ্টি হলেই ওই রাস্তা দিয়ে একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। রাস্তা খুঁড়ে রেখে আর কাজ না করায় ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী মানুষদের রাস্তা এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে শুকনো মৌসুমে ধুলাবালি অন্যদিকে বৃষ্টির সময় কাঁদা, একারণে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন । ঠিকাদার পলাতক এবং এলজিইডি কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও দুর্নীতিকে দায়ী করেছেন এলাকাবাসী। তাঁরা সড়কটির কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এলজিইডি জয়পুরহাটের বাস্তবায়নে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই সড়কের উন্নয়ন কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ইজিপি টেন্ডারের মাধ্যমে ৫৩ লাখ ৬১ হাজার ৩২৪ টাকায় মেসার্স আমান ট্রেডিং নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ২০ আগষ্ট এর মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও পরে আবার কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
পার্বতীপুর গ্রামের বাসিন্দা ছোহরাব, জাইদুর, উজ্জ্বল, শাহারুল, ইউসুফ, ছামছুল,ছানা, আফছারের কথা হলে তারা জানায়, আমাদের ইট বিছানো রাস্তাটি কাজের জন্য খোঁড়া হলে রাস্তার মাঝখানের মাটিগুলো উভয় পার্শ্বে রাখে ফলে, রাস্তাটি ড্রেনের মত পরিনত হয়। এ কারণে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় রাস্তা দিয়ে চলাচলের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। রাস্তা থেকে ওঠানো কিছু ইট রাস্তার উভয় পাশে পড়ে আছে। বাকী ইটগুলো বিয়ালা হাইস্কুল মাঠে দীর্ঘদিন ধরে খোয়া করে রাখা আছে ।
তারা আরো বলেন, আমাদের এ রাস্তাটিতে আগে ইট বিছানো ছিল সেটাই ভালো ছিলো। ঠিকাদার এবং এলজিইডি কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও দুর্নীতির কারণে উন্নয়নের নামে রাস্তাটি খুঁড়ে রাখার ফলে আমরা সীমাহীন কষ্টতে ভুগছি । আমাদের এত কষ্ট দেখার কেউ নেই কি?
একই গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি ব্যবসায়িক কাজে প্রতেকদিন ৮-১০ যাতায়াত করে থাকি। ঠিকাদার ইট তুলে রাস্তা খোঁরার পর অন্য জায়গায় প্রায় সব ইটগুলো খোয়া করে রেখেছে। ঠিকাদার পালিয়ে গেলে অতিষ্ঠ হয়ে গ্রামের লোকেরা অনেকবার কালাই অফিসে গিয়েছি । বারবার কাজের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জোবেদা বেগম বলেন, আমার ছেলে ইজিবাইক চালিয়ে পরিবার চালাত। রাস্তার কাজ বন্ধ হয়ে গেলে শুকনো সময়ে ধুলা-বালিতে অতিষ্ঠ আর কাঁদার সময় সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। ইজিবাইক আর বাড়িতে আনতে পারেনা। সে কারণে ইজিবাইকটি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। যে উন্নয়নের নামে দীর্ঘদিন মানুষদের ভোগান্তিতে পড়তে হয় সে উন্নয়ন না করাই ভালো।
কৃষক আজিজুল হক বলেন, আমাদের কষ্টের কথা আর কি শুনবেন ভাই। আমরা কৃষক মানুষ সারা বছর কৃষি কাজ করে খাই। বৃষ্টির সময় যে কষ্ট হয় তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আমার বাড়ি থেকে ২০০ ফিটের কম পাকা রাস্তা। তারপরও পাকা রাস্তায় বস্তা নিয়ে যেতে ১০০ টাকা ভারা দিতে হয়। তাহলে বুঝেন রাস্তা নিয়ে আমরা কি রকম কষ্টে আছি। গত বছর থেকে আমরা এ দুঃখ ভোগ করতেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমান ট্রেডিং এর ম্যানেজার আজিজুল হক বলেন, রাস্তাটির নিয়ে অফিসিয়ালি সমস্যা ছিলো। এক সপ্তাহের মত হলো সমস্যার সমাধান হয়েছে। রাস্তার সব মালামাল প্রস্তুত আছে। কাজের পরিবেশ হলে ঈদের আগে আর না হয় ঈদের পরপরই কাজ শুরু করবো।