নীলফামারীর জলঢাকায় একদিকে সরকারিভাবে কৃষকদের বিনামূল্যে ভুট্টার বীজ, সার প্রদান ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার সেইসাথে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে উপজেলায় ভুট্টার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা।সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপকভাবে ভুট্টার চাষাবাদ হয়েছে।
ভালো ফলনের আশায় কৃষকরাও অধীর আগ্রহে জমিতে ভুট্টা চাষ করছেন। চলতি রবি মৌসুমে হাইব্রিড জাতের ভুট্টার চাষাবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে।উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১টি পৌরসভা সহ ১১ টি ইউনিয়নে চলতি রবি মৌসুমে কৃষি বিভাগের তথ্যমতে ভুট্টার চাষ হয়েছে ৭৮০হেক্টর জমিতে। যা গত বছর ছিল ৪৬৫ হেক্টর।
উপজেলার চরাঞ্চলের অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষকরা রবি মৌসুমে গত কয়েক বছর যাবত আগাম জাতের হাইব্রিড ভুট্টার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন, তিস্তা সরেন চাষিরা। চরাঞ্চলে অন্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষ বেশি হয়ে থাকে। কম পরিশ্রম ও কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের ভুট্টাচাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে।কৃষকরা জানান, বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গমের পাশাপাশি ভুট্টার ব্যবহারও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভুট্টা গো-খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়। তাছাড়া পোল্ট্রি শিল্পের জন্যও ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
যে খানে প্রতি বিঘা জমিতে ১৫-১৬ মন ধান আবাদ হয়। সেই প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ হয় ৪০ থেকে ৪৫ মণ। বিঘা প্রতি আট থেকে দশ হাজার টাকা খরচ করে চাষিরা ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার ভুট্টা বিক্রি করতে পারেন।তিস্তার চরাঞ্চল ভাবনচুর, হলদীবাড়ি, ডাউয়াবাড়ী, শৌলমারী, কৈইমারী, ইউনিয়নের মাঠজুড়ে চলছে এই চাষাবাদ। সেখানকার কৃষকরা জানান, মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। পাশাপাশি কৃষি অফিস থেকে প্রাপ্ত বীজ ও সার সহায়তা এবং মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ তাদের কাজে এসেছে।
উপজেলার ভাবনচুর গ্রামের কৃষক কবির হোসেন বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে প্রণাদনার যুবরাজ ও গঙ্গা পদ্মা জাতের হাইব্রিড ভুট্টা চাষ করেছি ওজন এবং ফলন ভালো পেয়েছি।ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের চরঅঞ্চল গ্রামের আব্দুল আউয়াল বলেন, এখানকার মাটি ভুট্টা চাষের উপযোগী হওয়ার আমাদের চরাঞ্চলে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়। এ বছর ৪ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। আশা করছি বিঘা প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ মণ ফলন পাব।
গত বছর চরাঞ্চলে ভুট্টার ফলন ভালো হওয়ায় এবছর আরও অধিক জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। আমার দেখা-দেখি যারা অন্য ফসল আবাদ করতো তারাও এ বছর ভুট্টা চাষ করেছে। উপজেলার গোলমুন্ডা ইনিয়নের ভাবনচুর ব্লক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জুয়েল ইসলাম বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগতভাবে ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নতুন ফসল হিসেবে কৃষক যেন চাষাবাদের ক্ষেত্রে সমস্যায় না পড়ে সেজন্য আমরা সরাসরি কৃষককে সঠিকভাবে ভুট্টাচাষ করার পদ্ধতি শিখিয়ে দিচ্ছি। ভুট্টায় বিভিন্ন রোগ ও পোকা আক্রমণ করলে সেগুলো দমনে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।জলঢাকা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃসুমন আহম্মেদ জানান, ভুট্টা এখন এই উপজেলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব সময় ভুট্টার রোগ-পোকমাকড় দমনে ও অধিক ফলনের জন্য কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ ওপ্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।বিশেষ করে তিস্তার চরাঞ্চলের মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী।
আমরা কৃষকদের বিভিন্ন প্রণোদনা ও কারিগরি সহায়তা দিয়েছি। এতে করে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’তিনি আরো জানান, ভুট্টা এখন শুধু খাদ্যশস্য নয়, পোলট্রি ও ফিড শিল্পের কাঁচামাল হিসেবেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে বাজারে চাহিদা ও দাম দুটোই কৃষকের পক্ষে। আর সে কারণেই ভুট্টা চাষে সাফল্য কৃষকদের দিয়েছে নতুন আশার আলো।