1. info@www.jayjaysomay.com : দৈনিক যায়যায় সময় :
বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন

সৈয়দপুরে ইটভাটার ধোঁয়ায় ১০ একর জমির ধান নষ্ট, কৃষক চরম ক্ষতিগ্রস্থ

নীলফামারী প্রতিনিধি:
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৬ মে, ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নে কৃষি জমিতে গড়ে ওঠা একটা ইটভাটার ধোঁয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ১০ একর জমির ধান। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১০ জন প্রান্তিক কৃষকসহ আরও ১০ জন গৃহস্থ। প্রায় কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে তাদের দাবি।

কিন্তু ইটভাটা মালিক কোন গুরুত্ব দিচ্ছেন না বরং গালাগাল করাসহ অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে এবং লিখিত অভিযোগ দিলেও কৃষি বিভাগ ও প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এতে ক্ষতিগ্রস্থরা চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে জেলা প্রশাসককে লিখিত আবেদন করেছেন এলাকাবাসী।

খাতামধুপুর ইউনিয়নের কোচারপাড়া এলাকায় তানিয়া ব্রিকস লিমিটেড (টিবিএল) নামে ইটভাটার পাশে প্রায় ৮-১০ একর জমির কাঁচাপাকা ধান ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় পুড়ে চিটা হয়ে গেছে। সোমবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে ঘটনাস্থলে গেলে এলাকার রাকিবুল ইসলাম নামে ক্ষতিগ্রস্ত যুবক বলেন, ইটভাটাটি একে কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে তার উপর সম্পূর্ণ অবৈধভাবে চলছে। ভাটার কালো ধোঁয়ায় প্রতি মৌসুমেই ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এবারও প্রায় ১০ একর জমির ধান পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা ইটভাটায় গিয়ে ধান নষ্ট হওয়ার কথা জানালে ভাটা ম্যানেজার কবিরসহ অন্যান্য কর্মচারীরা গালাগাল করাসহ অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে জানালে তিনিও ভ্রুক্ষেপ করেনি।

বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেই। কিন্তু তারপরও কোন সুরাহা না পেয়ে জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এতেও যদি আমরা ক্ষতিপূরণ না পাই তাহলে মানববন্ধন সহ বৃহত্তর আন্দোলনে যাবো।

কারণ এই ইটভাটার কারণে পাশের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জামেয়া মাদরাসা, রেশম বোর্ডের চাকী পশুপালন কেন্দ্রে পরিবেশ দূষণগত নানা সমস্যা হচ্ছে। সেইসাথে আবাসিক এলাকার ফলগাছগুলোর ফলন কমে গেছে। তাই এখান থেকে ভাটাটি অপসারণ জরুরি হয়ে পড়েছে।

ক্ষতিগ্রস্থ প্রান্তিক কৃষক ওবায়দুল ও তার স্ত্রী জাহিদা খাতুন বলেন, আমরা গরীব মানুষ। সামান্য ১ দোন (৩০ শতক) জমির আবাদ দিয়েই আমাদের সারাবছরের ভাতের জোগান হয়। কিন্তু এভাবে প্রতিবারই ভাটার ধোঁয়ায় ধান নষ্ট হওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছি। ক্ষতিপূরণ না পেলে সারাবছর না খেয়ে থাকতে হবে। কারণ চাল কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নাই। আমরা এখন দুই মেয়ে নিয়ে চরম দূরাবস্থার শিকার। এর সুরাহা চাই।

আরেক ক্ষতিগ্রস্ত চাষী ধরিয়া বলেন, আমার নিজের কোন জমি নাই। অন্যের ৩০ শতক জমি বর্গা নিয়ে ধান আবাদ করেছি। আবাদের খরচটাই লস হয়ে গেলো। অথচ ভাটা মালিক ক্ষতি স্বীকার না করে আমাদের কে চাঁদাবাজ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

ভাটার ম্যানেজার আজিজুল কবির বলেন, ভাটার ধোঁয়ায় ধানের ক্ষতি হয়নি। প্রাকৃতিক কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনছারুল ইসলাম বলেছেন, সামান্য ওষুধ ব্যবহার করলেই ধানগুলোর ভালো ফলন পাওয়া যাবে। আমরা ওষুধের খরচ দিতে চেয়েছি। কিন্তু তারা তা নেয়নি।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনছারুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ভাটা ম্যানেজার ভুল বলেছেন। আমি সেভাবে বলিনি। বরং নষ্ট ফসলের ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য বলেছি। এক্ষেত্রে ভাটা মালিক গুরুত্ব না দেয়ায় ক্ষতিগ্রস্তরা উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে।

ভাটার মালিক আহসান হাবীব সাজু বলেন, আমার ভাটার ধোঁয়ায় ধানের ক্ষতি হয়নি। কেননা আমার ভাটার আগুন এখনও জ্বলছে। মূলত: আগুন নেভানোর সময় ত্রুটি হলে গরম ধোঁয়া বা গ্যাস বের হয়ে এমন সমস্যা হয়। কয়েকদিন আগে এলবিএল ভাটার আগুন নেভানোয় এমনটা হয়ে থাকতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ওই ভাটার ম্যানেজার আউয়াল এই এলাকার লোক। সে নিজেদের দোষ ঢাকতে আমার টিবিএল ভাটার বিরুদ্ধে লোকজনকে লেলিয়ে দিয়েছে। তারা সবাই আওয়মী লীগের দোসর। আমি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এবং ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি। এজন্য তারা আমাকে হয়রানি করছে।

এতোদিন এখানে ব্যবসা করতে তাদের চাঁদা দিতে হয়েছে। এখনও তারা চাঁদার ধান্দা করছে। কিন্তু এখন আর আমি চাঁদা দিবোনা। কারণ পট পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমি তাদের দেখে নিবো। ক্ষতি না করেও মানবিক কারণে ওষুধ কেনার জন্য টাকা দিতে সম্মত আছি। কিন্তু পুরো ফসলের ক্ষতিপূরণ দিতে পারবোনা। এতে তারা বা প্রশাসন কি করে দেখি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট